নেত্রকোনা জেলা শহরের মোক্তারপাড়ায় মন্দিরে হামলার ঘটনা নিয়ে ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ভারতের স্যোসাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবারে নেত্রকোনায় মন্দিরে হামলা নিয়ে ভাইরাল হওয়া খবরটি ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। বিষয়টি এদেশের সকল সম্প্রদায়ের দৃষ্টি গোচর হওয়ায় তারা এ ধরণের অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেত্রকোনা জেলা সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) এর সভাপতি প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল মন্দিরে হামলা ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, নেত্রকোনায় কোন হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়নি। কোন ইসকন সদস্যের উপরও হামলা হয়নি। ভারতের স্যোসাল মিডিয়ায়, পত্র পত্রিকায় নেত্রকোনার ঘটনা নিয়ে যেভাবে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে, তা ঠিক নয়। গুজব ছড়ানোর ফলে এখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে এক ধরণের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মোক্তারপাড়ায় কো-অপারেটিভ ব্যাংক সংলগ্ন ৯ কাটা (৯০ শতক) দেবোত্তর সম্পতিতে শ্রী শ্রী গৌর গোঁপাল বিগ্রহ মন্দির ও তার চারপাশে বেশকিছু বাসা বাড়ী ও দোকানপাট রয়েছে এবং সেগুলো ভাড়া দিয়ে মন্দির চলে।
সেখানে ভূমি দাতাদের উত্তরাধিকার তাপস কুমার সরকারের বোন ছায়ারানীও সরকার বসবাস করতেন। ঘরটি মেরামত করতে তার বোন মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। এরই মধ্যে খালি হওয়ার সংবাদ পেয়ে গত ১৭ জানুয়ারী রোজ শুক্রবার দিন সকাল বেলায় ইসকন সদস্যরা ঢোল করতাল ও একটি কৃষ্ণ মূর্তি নিয়ে ঘরটি দখলে নিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় দুপুরেই তাপস সরকার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ইসকন সদস্য সুবীর চন্দ্র সরকারকে বিবাদী করে। মামলায় উল্লেখ করেন, পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ইসকন সদস্য সুবীর চন্দ্র সরকার শত্রুতা পোষন করে আসছিলো। এর জের ধরে গত বিগত ১৭ জানুয়ারী ৩০/৪০ জন ইসকনের সদস্য নিয়ে তারা বেআইনীভাবে দখল পায়াতারা করে। কিন্তু বিকাল থেকে মোক্তারপাড়া এলাকায় ইসকনের দখল নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করে। ভূমির মালিক ও ইসকনদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
ভূমির মালিক ছায়ারানি ও তার বোন অভিযোগ করে বলেন, তাদের গায়ে ইসকনের পুরুষরা হাত তুলেছেন। এসময় তারা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
পরবর্তীতে সন্ধ্যা বেলায় বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এরপর মডেল থানার পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। পরবর্তীতে পুলিশ সংঘাত ছাড়া দখলকারী ইসকনের সদস্যদের ঘরের ভেতর থেকে বের করে নিরাপদে তাদের ইসকন মন্দিরে পাঠিয়ে দেয়।
মন্দির কমিটির সূত্রে জানা যায়, মন্দিরের একটি কমিটি থাকা সত্বেও বিবাদী মন্দিরের সেবায়েত সুবীর ভূঁয়া আরেকটি কমিটি গঠন করে ইসকনের কাছে জাল দলিলে ভূমি বিক্রি করে দেয়। যা নিয়ে ওই এলাকায় বসবাসকারী হিন্দুদের মাঝে এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পরর্বীতে ইসকন নেত্রকোনা জেলার প্রধান সম্বনয়কারী জয়রাম দাস সাতপাই ইসকনে কার্যলয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, নেত্রকোনা জেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ বেশ কয়েক বছর আগে মোক্তারপাড়াস্থ দেবোত্তর সম্পত্তির কিছু অংশ ইসকনের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেন। কিন্তু আমরা তার দখল পাচ্ছিলাম না। এ নিয়ে আদালতে মামলা মোকাদ্দমা চলে আসছে। সম্প্রতি জনৈক ভাড়াটিয়া মোটা অংকের অর্থ নিয়ে দেবোত্তর সম্পত্তির জায়গা অন্যের নিকট হস্তান্তর করছে জেনে আমরা বাসা দখলে নিতে গেলে তারা আমাদের উপর হামলা চালিয়ে সাত জন ইসকন সদস্যকে আহত করে।
এরপর ১৯ জানুয়ারী বিকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সকল সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, জন প্রতিনিধি, জেলা পূঁজা উদ্যাপন পরিষদ, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, ইসকন, মিডিয়ার কর্মীদের নিয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য জেলা প্রশাসককে আহবায়ক ও জেলা পুঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতিকে সদস্য সচিব এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তখন থেকেই এ পর্যন্ত কোন অ্স্থিতিশীল পরিস্থিতির হয়নি।